ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সায়মা রহমান.
যেকোন জাতির জাতিসত্তার মর্মমূলে গ্রোথিত থাকে মা,মাটি,মাতৃভাষা। যা মিশে থাকে জাতির সামগ্রিক অস্তিত্বে। বাঙালি জাতির এই অস্তিত্বকে সমুন্নত রাখতে অতিক্রম করতে হয়েছিল এক দু:সাহসিক যাত্রার সুদীর্ঘ পথ। সেই দু:সাহসিক যাত্রার পথ পরিক্রমায় বাঙালি জাতির অনন্য দুটি অর্জন হলো বাংলাভাষা ও বাংলাদেশ। বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশ নামক ভূখন্ড প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা,কর্ম ও দর্শনের প্রভাব ছিলো সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বত্র জুড়ে রয়েছে তাঁর নাম। তাই বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ,বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলার গর্বিত ইতিহাস। বাঙালির অস্তিত্ব, মর্যাদা, ভাষা, সংস্কৃতির ব্যাপারে সর্বদা সজাগ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সকল পর্যায়ের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো বঙ্গবন্ধুর সম্মুখ নেতৃত্ব। তিনি পূর্ববাংলার মানুষের ভাষার অধিকার তথা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল আন্দোলন ও সেসব আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরিতে সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, এই রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে বাঙালির নিষ্পেষিত হবার ফাঁদ পাতা রয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বেই ভাষার অধিকার তথা বাঙালি জাতিসত্তার মর্মমূলে আঘাত আসে। এই অস্তিত্বের আঘাতকে প্রতিহত করতে বাঙালি জাতি সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিভাগোত্তর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক চুড়ান্ত বিভাজন রেখা তৈরি হয়। যার পরিণতি ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন বাঙালির অস্তিত্বের মূল থেকে জেগে ওঠেছিলো। বাঙালির জাতিসত্তাকে উন্মোচিত ও উদ্বোধিত করেছিল ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মচেতনার জায়গাটি অনেকখানি বদলে যায় এবং পরিণতির পথে অনেকখানি এগিয়ে গিয়ে যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় দেশভিত্তিক আন্দোলনে। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি ছিলো ভাষা আন্দোলন। বাঙালি জাতির গণচেতনার সর্বপ্রথম বহিঃপ্রকাশ এবং স্বাধীকার আন্দোলনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্টার প্রথম পর্বেই বঙ্গজ সংস্কৃতি প্রত্যাখানের একটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্ভাব্য হামলার প্রতিরোধ করতে এবং তার বিরুদ্ধে বাংলার জনগনকে সচেতন করতে এবং অধিকার আদায়ে আন্দোলনমুখী করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিলো অগ্রগন্য। বাংলার হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষকে অধিকার সচেতন ও অধিকার আদায়ে যূথবদ্ধ করে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করার ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটা অপচেষ্টা কেউ কেউ করলেও “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী” ও “কারাগারের রোজনামচা” এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর এই অপচেষ্টা কিছুটা দূরীভূত হয়, এবং ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার অত্যন্ত কঠোর নজরদারি ছিলো। তিনি কখন, কোথায়, কি করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন এসব বিষয়ে কড়া নজরদারি ছিলো। কারণ ”পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর দৃষ্টিতে শেখ মুজিব ছিলেন সবচেয়ে বিপদজনক রাজনৈতিক ব্যক্তি অথবা ভয়ানক শত্রু।” পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এসব রিপোর্ট থেকে ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশ সৃষ্টির নেপথ্যে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অধিকাংশ ভাষা সৈনিকের ভাষ্যমতেও সে স্বীকৃতির প্রমান পাওয়া যায়।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনে তিনি অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাহিত্যিক অন্নদাশংকর রায়ের লেখায় বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলনে জড়িত হবার প্রসঙ্গটি এভাবে আছে যে,“আমরা শেখ সাহেবকে প্রশ্ন করি, বাংলাদেশের আইডিয়াটি প্রথম কিভাবে আপনার মাথায় এলো? বঙ্গবন্ধু মুচকি হেসে বললেন, সেই ১৯৪৭ সালে। পাকিস্তান প্রস্তাব তখনকার মতো মেনে নেই, কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা। হঠাৎ একদিন রব ওঠলো, আমরা চাই বাংলাভাষা। আমিও ভিড়ে যাই ভাষা আন্দোলনে। ভাষাভিত্তিক আন্দোলনই একটু একটু করে রূপ নেয় দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন একদিন আসে, আমার দলের লোকদের জিজ্ঞেস করি, আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে পাক বাংলা, কেউ বলে পুর্ব বাংলা। আমি বলি না, বাংলাদেশ। তারপর আমি স্লোগান দেই জয়বাংলা। জয়বাংলা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, বাংলাভাষা, বাংলাদেশ, বাঙালি জাতির জয় বা সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।”
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্তে¡র রাজনৈতিক ভাবাদর্শের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ভারত গঠিত হয়। মধ্যযুগীয় ধর্মাবরণ ও ঔপনিবেশিক শক্তির করতল থেকে বেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থান হচ্ছিল, সেই সময়ে শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে ছিলো এক অভিনব পরীক্ষা। এর দুইটি অংশ পরষ্পর হতে পনের শত মাইল বিদেশী এলাকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। শুধু ভৌগোলিক দিক থেকে অবাস্তব নয়, অন্যান্য দিক হতেও যেমন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রেই ছিলো চরম বৈশাদৃশ্যপূর্ণ। একমাত্র ধর্ম ছাড়া কোন মৌলিক ঐক্যবন্ধন ছিলোনা। তাই পাকিস্তানের জন্মের পর হতেই দুই অঞ্চলের মধ্যে অসম অর্থনীতি ছাড়াও জাতিগত, মানসগত, প্রকৃতিগত, সংস্কৃতিগত এবং ইতিহাসের স্বতন্ত্র সত্তাগুলি ক্রমশ প্রকট হতে থাকে।
১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির পুর্বেই শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে রাষ্ট্রভাষার প্রসঙ্গটি বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়েছিলো। বিশেষত পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ১৯৪৭ সালের ১৮ মে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দূর পক্ষে মতামত রেখেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ৩রা জুন ভাইসরর লর্ড মাউন্টব্যাটেন যখন ভারতভাগের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই সংবাদপত্রে খবর বেরোয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা উর্দূকে হবু রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চাইছেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড.জিয়াউদ্দীন আহমদ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, হিন্দিকে যেহেতু ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে, উর্দূকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা উচিত। পাকিস্তান নিশ্চিত হবার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত খবর প্রচারিত হলে ড.মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর প্রেক্ষিতে জোড়ালোভাবে বলেন,“উর্দু পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু নয়। যদি বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজী ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহন না করার পক্ষে কোন যুক্তি নেই।”
পাকিস্তান জন্মের পরপরই রাষ্ট্রভাষার সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সাথে বঙ্গবন্ধুও কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে সমবেত হয়েছিলেন। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতায় পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারনে সমবেত হয়েছিলেন কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী। সেখানে পাকিস্তানে একটি একটি অসাম্প্রদায়িক ও গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সে প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর মুসলিম লীগের যুবকদের উদ্যোগে গঠিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের এক কর্মী সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সেই কর্মী সম্মেলনে ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেন সেদিনের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। মূলত সেদিন তিনি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন,“বাংলা ভাষাকে পূর্ববঙ্গের লিখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হোক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হোক”। (সূত্র: ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা- ভাষা সৈনিক গাজীউল হক)। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলণে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়। এ খবর প্রচারিত হলে ছাত্রদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ভাষাবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকেও জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষাবিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ভাষার অধিকার ও অন্যান্য দাবী সম্বলিত ২১ দফা দাবী নিয়ে একটি ইশতেহার পুস্তিকা আকারে প্রচার করেছিলেন। ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবীর মধ্যে দ্বিতীয় দাবীটি ছিলো রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত। ঐতিহাসিক ইস্তেহারটি ছিলো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক প্রামান্য দলিল। এই ইশতেহার প্রনয়নে শেখ মুজিবের ভূমিকা ছিলো অগ্রগন্য, এবং তিনি ছিলেন এর অন্যতম স্বাক্ষরদাতা। মূলত পাকিস্তান সৃষ্টির তিন/চার মাসের মধ্যেই এই পুস্তিকাটির প্রচার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের পাকিস্তান নামের স্বপ্নের প্রতি মোহভঙ্গের সূচনা করে।
১৯৪৮ সালের ২৩ই ফেব্রুয়ারি, করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে পূর্ব বাংলা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রস্তাব আনেন যে,উর্দূ ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এবং পূর্ব বাংলার মুসলিম লীগ সংসদ সদস্যরা বাংলাভাষার দাবীর এই প্রস্তাব অগাহ্য করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক আনীত প্রস্তাব পাকিস্তান সরকারের একগুয়েমী ও মুসলিম লীগ নেতাদের অদূরদর্শিতার কারণে বাতিল হয়ে যায়। গণপরিষদে বাংলাভাষা বিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ঢাকায় ছাত্রসমাজ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও যুক্ত হতে থাকে। পূর্ববাংলার জনগণের মনে রাষ্ট্রভাষার সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে এবং শংকিত হয়ে উঠে পূর্ববাংলার নেতারা। বাংলাভাষার প্রসঙ্গটি সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে ১৯৪৮ সালের ২রা মার্চ তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ সভায় “রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”গঠিত হয়। এই যৌথ সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে “বাংলা ভাষা দাবি দিবস” ঘোষণা করা হয় এবং ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও অনেকেই তখন দোদূল্যমানতায় ভুগছিলো তখন একটা বজ্রকন্ঠ সচকিত হয়ে ওঠলো “সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দীনের সরকার কি বাংলাভাষার দাবী মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে। সেক্রেটারিয়েটের সামনে প্রিকেটিং হবে।”এই বজ্রকন্ঠ ছিলো শেখ মুজিবের। তাঁকে সমর্থন দেন অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত ও সামছুল হক সাহেব। আপসকামীদের ষড়যন্ত্র ভেসে যায়। অলি আহাদ উল্লেখ করেছেন, সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌছাতেন, তাহলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতনা। শেখ মুজিব সেদিন গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি অনণ্য দিন। এদিন ভাষার দাবীতে প্রথম হরতাল পালিত হয়। সেসময় এটাই ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম হরতাল। এই হরতালের নেতৃত্ব দেন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। হরতালের কারণে শেখ মুজিব পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতার ছিলো পাকিস্তানের প্রথম কোন রাজনৈতিক নেতার গ্রেপ্তার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এ গ্রেপ্তারকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের এক টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন।
“কারাগারের রোজনামচায়” বঙ্গবন্ধু বলেছেন, প্রথম ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (এখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ) ও তমুদ্দন মজলিসের নেতৃত্বে। ঐদিন আমি, জনাব শামসুল হক সাহেব সহ প্রায় ৭৫ জন ছাত্র গ্রেপ্তার হই এবং আব্দুল ওয়াদুদসহ অনেকেই ভীষণভাবে আহত হয়ে গ্রেপ্তার হয়। (পৃষ্ঠা-২০৬)। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও লিখেছেন, ”আমাদের উপর কিছু উত্তম মধ্যম পড়ল এবং ধরে নিয়ে জীপে তুলল। বহু ছাত্র গ্রেফতার ও জখম হল। আমাদের সত্তর-পচাত্তর জনকে বেঁধে নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিল সন্ধ্যার সময়। ফলে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠল। এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করেছেন, জেলের যে ওয়ার্ডে আমাদের রাখা হয়েছিল, তার নাম চার নম্বর ওয়ার্ড। তিনতলা দালান, দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম, সকাল দশটায় মেয়েরা ছাদে ওঠে ¯েøাগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটুও ক্লান্ত হত না। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বন্দী ভাইদের মুক্তি চাই, পুলিশি জুলুম চলবেনা”-নানা ধরনের ¯েøাগান। এইসময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম,“হক সাহেব ঐ দেখুন,আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবেনা।” হক সাহেব আমাকে বললেন,“তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব।”(পৃষ্ঠা-৯৪-৯৫)
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ছাত্রদের শোভাযাত্রা, সভা, পিকেটিং ও বিক্ষোভ সমূহকে খাজা নাজিমুদ্দীনের মুসলিম লীগ সরকার লাঠি, টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি বর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। এ আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। বাঙালি এই প্রথম পাকিস্তানের প্রকৃত পরিচয় লাভ করে। যার ফলে এই আন্দোলন সারা দেশজুড়ে গণআন্দোলণে রূপ নিতে থাকে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্যান্য যেসব সংগ্রামী সাথী ছিলেন,তাঁদের মধ্যে আতাউর রহমান খান, মো:তোয়াহা, অলি আহাদ, শামসুল হক, এইচ,এম কামরুজ্জামান, জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদের নাম উল্লেখযোগ্য। আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকলে খাজা নাজিমুদ্দীনের সরকার ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসতে রাজী হন। উভয়পক্ষ মিলে একটা খসড়া চুক্তি প্রনয়ন করেন। কিন্তু শেখ মুজিবসহ অধিকাংশ ছাত্রনেতারা তখন জেলে থাকায় অন্যান্য ছাত্রনেতৃবৃন্দ তাঁদের অনুমোদন ব্যতীত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে অসম্মতি জানায়। এ প্রসঙ্গে ভাষা সৈনিক অলি আহাদ বলেছেন,“চুক্তিপত্রটি ১১ মার্চ ধৃতবন্দীগণ কর্তৃক অনুমোদনের পর জনাব অধ্যাপক আবুল কাশেম ও জনাব কমরুদ্দীন আহমদ কারান্তরালে আমাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হইলেন। জনাব শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ও আমি (অলি আহাদ) বন্দীগণের পক্ষ হইতে খসড়া চুক্তির শর্তাবলী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমোদন করিলাম। অনুমোদনের পর আটদফা চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। অটদফা চুক্তিপত্রটি সরকারেরপক্ষ খেকে স্বাক্ষর করেন খাজা নাজিমুদ্দীন আর সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে কমরুদ্দীন স্বাক্ষর করেন। এই ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে সর্বপ্রথম বাংলাভাষা পূর্ব বঙ্গের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয় এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৫ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য কারাবন্দীরা মুক্ত হয়। এতে করে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়।
সরকারের এই সাময়িক নমনীয়তার প্রতি সতর্ক অবস্থানে থেকে আন্দোলন যাতে ফাটল না ধরে বা অনৈক্য সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য জেল থেকে বের হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার পথে গেলেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পুকুরধারে একটি ছাত্রসভা অনুষ্টিত হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব বাংলার এরূপ বিক্ষুদ্ধ রাজনেতিক পরিস্থিতির মুখে ঢাকার মাটিতে পা রাখেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ ২১ শে মার্চের রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় তিনি বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দূ, অন্য কোন ভাষা নয়। জনসভার পেছন ছাত্র জনতা থেকে প্রতিবাদ ওঠে। এর তিন দিন পর ২৪ শে মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি কোনরূপ শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের ভাষাকে উপেক্ষা করে একই কথা পূনরাবৃত্তি করেন এবং উর্দূকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করেন। জিন্নাহর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের নিকট হতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছিলো। তাঁর সামনেই তরুণ ছাত্রসমাজ নো-নো বলে প্রতিবাদের ধ্বনি উচ্চারণ করেন। পরপর দু’দিন জিন্নাহর ভাষণে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণাকে পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিবাদী অংশ তাৎক্ষনিকভাবে বিরোধিতা করবে এ ধারণা সরকার ও জিন্নাহর কাছে ছিলো অকল্পনীয়, কারণ সেসময় তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে পূর্ব বাংলার তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ একটি শক্তির উন্মেষ ঘটতে শুরু করে যা পরবর্তীকালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
এদিকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সমগ্র দেশ সফর শুরু করেন, জনমত তৈরি করতে থাকেন। প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। জনমত তৈরিতে ও প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলায় বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক দক্ষতার স্বাক্ষর ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করেন। ১৯৪৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই আবার দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির জন্য সফর শুরু করেন। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে শেখ মুজিবকে পুনরায় আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে পাকিস্তান সরকার। কারাগার থেকেই তিনি আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতেন। কোন কিছুতেই পিছপা হননি তিনি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে, তিনি এক জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, “বাংলা ভাষা শতকরা ছাপ্পান্নজন লোকের মাতৃভাষা, পাকিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সংখ্যাগুরুদের দাবী মানতেই হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।” তাতে যাই হোক না কেন,আমরা প্রস্তুত আছি”(পৃষ্টা-১০০)। আরও উল্লেখ আছে, একদিন সঙ্গীত শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের সাথে নদীপথে যাত্রার সময় সঙ্গীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন গান গাইছিলেন,তাঁর গানের সুরের সাথে মনে হচ্ছিল নদীর পানিও গান গাইছে। তিনি আব্বাসউদ্দীনের একজন ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আব্বাস উদ্দীন বলেছিলেন, “মুজিব,বাংলাভাষার বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা না হলে বাংলার কৃষ্টি,সভ্যতা সব শেষ হয়ে যাবে। আজ যে গানকে তুমি ভালোবাস, এর মাধুর্য ও মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে। যা কিছু হোক, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতেই হবে।”আমি কথা দিয়েছিলাম ও কথা রাখতে চেষ্ঠা করেছিলাম (পৃষ্টা-১১১)। ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান কর্তৃক গণপরিষদে পেশকৃত মূলনীতি কমিটির রিপোর্টে উর্দূকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষনা করেন, যা ছিলো রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির বরখেলাপ। ফলে পূর্ব বাংলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ১৯৫০ ও ১৯৫১ সনে যথারীতি ১১ শে মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস প্রতিপালিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারী পল্টনে এক জনসমাবেশে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন তাঁর আটদফা চুক্তিতে স্বাক্ষরের কথা ভুলে গিয়ে পুনরায় উর্দূকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষনা করলে সমগ্র পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এর প্রতিবাদে ৩০ শে জানুয়ারী ঢাকায় প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ৩০ শে জানুয়ারী সর্বদলীয় কর্মী সমাবেশে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয়। এ সভায় স্থির হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারা প্রদেশব্যাপী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হবে। কর্মসূচি সফল করার জন্য ৪ ফেব্রুয়ারী হরতাল এবং ১১ ফেব্রুয়ারি “পতাকা দিবস” পালিত হয়। এসব কর্মসূচির প্রতিটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় নেতৃত্ব ছিলো। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুকে ভাষা আন্দোলনের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার কারণে কারাগারে থাকতে হয়েছিলো। ভাষা আন্দোলণে নেতৃত্বের কারণে শেখ মুজিবকে অনেকবার কারাগারে প্রেরণ করে পাকিস্তান সরকার। যার কারণে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলণের সময়টিতে তিনি আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হতে পারেননি। বন্দী থাকা অবস্থায়ও তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্র সমাজকে উদ্ধুদ্ধ করতেন এবং গোপনে দিক নিদের্শনা দিতেন। জেল থেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। মহিউদ্দীন আহম্মেদও তখন জেলে বন্দী ছিলেন। মহিউদ্দীনের ভাষ্যমতে, তারা উভয়েই যুক্তি ঠিক করলেন, মুজিব অসুস্থতার ভান করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন। সেভাবেই মুজিবকে ডাক্তারের সাহায্যে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে সমর্থ হলাম। ভাষা আন্দোলনকে গতিশীল করার উদ্দেশ্যেই এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। যা পরবর্তী আন্দোলনে লক্ষনীয়। শেখ মুজিব বন্দী অবস্থা থেকেই সামছুল হক চৌধুরী, আব্দুস সামাদ আজাদ ও গোলাম মাওলার মাধ্যমে ২১ শে ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসুচী গ্রহনের পরামর্শ দেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের তরুণ নেতাদের কাছে গোপনে চিঠিপত্র পাঠিয়ে সতর্ক করে বলেন, ২১ তারিখে সরকার যদি ১৪৪ ধারা জারি করে তাহলে আওয়ামী লীগের কমান্ডের নির্দেশ যাই হোক , ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেন সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেয়। তিনি বলেন, ”১৯৪৮ সালে ছাত্ররাই এককভাবে বাংলাভাষার দাবীর জন্য সংগ্রাম করেছিলো। এবার আমার বিশ্বাস ছিল, জনগণ এগিয়ে আসবে, কারণ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে যে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করতে পারলে, তাদের দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পরতে হবে। মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি সহ্য করতে পারেনা”(পৃষ্ঠা-১৯৭)।
পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৫১ সালের ৩০ শে আগষ্ট থেকে ১৯৫২ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময় হাসপাতালের কেবিন থেকে নিরাপত্তা বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে সমকালীন রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন। ১৯৫২ সালে পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমউদ্দীন পুনরায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে পূর্ববঙ্গের ছাত্রজনতা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বন্দী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছাত্রনেতাদের আলাপ আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “খবর পেয়েছি আমাকে শীঘ্রই জেলে পাঠিয়ে দিবে, কারণ আমি নাকি হাসপাতালে বসে রাজনীতি করছি। তোমরা আগামীকাল রাতে আবার এস। আরও দুএকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকেও দেখা করতে বললাম। পরের দিন রাতে এক এক করে রাতে অনেকেই আসল । সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১শে ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রæয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি শুরু হবে। আমি আরও বললাম,আমিও আমার মুক্তির দাবী নিয়ে ১৬ই ফেব্রুয়ারি খেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব। আমার ছাব্বিশ মাস জেল হয়ে গেছে। মহিউদ্দীনও জেলে আছে,আমার কাছে থাকে। যদি সে অনশন করতে রাজী হয়, তবে খবর দেব। ”(পৃষ্ঠা-১৯৭)
১৬/১৮ ফেব্রæয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধু ও মহীউদ্দীন আহমদ কারাগারের অভ্যন্তরে অনশন শুরু করেন। এ খবর জানাজানি হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অনশনের বিষয়টি তদানীন্তন বঙ্গীয় পরিষদের সদস্য আনোয়ারা খাতুন মূলতবী প্রস্তাব হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই অনশনের বিষয়টি মূখ্যভাবে উপস্থাপিত হয় বঙ্গীয় আইন পরিষদে। তাছাড়া সরকারি গোয়েন্দারা যখন টের পেল যে, শেখ মুজিব জেলে বসে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর দল ও অনুসারীদের উৎসাহিত করছে, তখন আকস্মিকভাবে শেখ মুজিবকে ১৫/১৬ তারিখের দিকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত করেন। ফরিদপুর জেলে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জ ষ্টেশনে আসলে নেতাকর্মীরা সেখানে দেখা করতে যান এবং তিনি সেই সময়টুকুতে আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। তিনি অনুরোধ করে বলেন, হরতাল মিছিল শেষে আইনসভা ঘেরাও করে বাংলাভাষার সমর্থনে সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করার কথা বলেন। এদিকে ঢাকা বেতার থেকে ১৪৪ ধারা আদেশ জারী করে এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। এদিকে ভাষার দাবীতে সারাদেশে মিটিং, মিছিল চলতেই খাকে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রæয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা মিছিল বের করে। তারা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে,“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। মিছিলের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলি চালানো হয়। গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বার, সফিউরসহ অনেকে প্রান হারায়। এ হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা শহর জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরদিন ২২ শে ফেব্রুয়ারী শহীদদের গায়েবী জানাজায় লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়। পাকিস্তান সরকারও বিশেষ করে ঢাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। অনেক নেতাকর্মীকে জেলে নেওয়া হয়।
পাকিস্তান সরকারের বিশেষ গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ১৮ ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব ও মহিউদ্দীন আহমদ অনশন শুরু করেছিলেন এবং ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তাঁরা অনশন ভঙ্গ করেন। এদিকে ২৭শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে খুব অসুস্থ অবস্থায় জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ১লা মার্চ মহিউদ্দীন আহমদ মুক্তি পান। এদিকে সারাদেশে গ্রামে গ্রামে সাধারণ জনগনও বুঝতে পারে,যারা শাসন করছে তারা জনগনের আপন নয়। তারা বুঝতে আরম্ভ করে, বিশেষ একটা গোষ্ঠী বা দল বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। তাই সারাদেশে জনমত তৈরিও হতে থাকে। এদিকে মুসলিমলীগের নানা অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের কারণে জনগন মুসলিমলীগ বিরোধী হয়ে ওঠতে খাকে। আওয়ামী লীগের প্রতিই জনগণের আস্থা দিন দিন বাড়তে থাকে। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একটা প্রেস কনফারেন্স করেন। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং যাঁরা ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তি দাবী করেন। “সরকারি নথিতে উল্লেখ আছে যে, শেখ মুজিবুর রহমার ২৭ এপ্রিল ১৯৫২ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সম্মেলনে উপস্থিত হন এবং আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। সভায় তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে গণভোটের প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এ সভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,“আমরা বাঁচতে চাই, লেখাপড়া চাই, ভাষা চাই।”
বঙ্গবন্ধু বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ও আপোষহীন ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী কর্র্তৃক বাংলাকে আঞ্চলিকভাষা হিসেবে মর্যাদাদানের সুপারিশের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি তাঁর নেতাকেও বাংলাভাষা সম্পর্কে আঞ্চলিকভাষা করার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধিতা করতে ছাড়েননি। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে শেখ মুজিবের দৃঢ়তা লক্ষ্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী এক পত্রে লিখেছিলেন, লক্ষনীয়, শেখ মুজিব ভাষার বিষয়ে যেমন, ঠিক তেমনই রাজনৈতিক কর্মকান্ড, দলীয় কাজকর্ম, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়েও সমানভাবে চিন্তা করতেন। তিনি এজন্য জেল জুলুমের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতেন। ১৯৫৩ সনের শুরু থেকেই শেখ মুজিব বিভিন্ন সভা সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবী তোলেন এবং উর্দূকে বয়কট করার ব্যাপারে সোচ্চার হন। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান তার স্কুল কলেজে বাংলা চালু করেনি। কিন্তু এখানকার স্কুল কলেজে নূরুল আমিন সরকার উর্দূকে চালু করেছে। তারা যদি বাংলাকে মেনে না নেয়, তাহলে কয়েক মাস পর আমরাও উর্দূকে বয়কট করব। ১৯৫৩ সনের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরীতে মাওলানা ভাসানী ও অন্যান্য নেতার সাথে বঙ্গবন্ধু ছিলেন। সেদিনও সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি দাবী জানান বঙ্গবন্ধু। ভাষা আন্দোলনের পর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান ও সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু এর পিছনেও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৪ সনে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করার পর প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় খাকাকালীন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পূর্ব বঙ্গে সরকারি ভাষা বলতে আমরা রাষ্ট্রীয় ভাষা বুঝিনা, কাজেই খসড়া শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ভাষা সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হযেছে, তা কু-মতলবে করা হয়েছে। আরও বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় ভাষা প্রশ্নে কোন ধোকাবাঝি করা যাবেনা। পূর্ববঙ্গের জনগনের দাবী এই যে, বাংলাও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। এই দাবীর প্রেক্ষিতে ৭মে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানের পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী। এর পিছনেও বিশেষ অবদান রয়েছে বঙ্গবন্ধুর।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৪ সনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিশ্বসভায় বাংলাকে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। মূলত বাংলাভাষায় সংবিধান প্রনয়ণ করেন বঙ্গবন্ধু। এটিই একমাত্র দলিল যা বাংলাভাষায় প্রনীত হয়েছিলো। ১৯৭৫ সনের ১২ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু সরকারি কাজে বাংলাভাষা প্রচলণের প্রথম সরকারি নির্দেশ জারি করেন। পৃথিবীর বুকে মাতৃভাষার অধিকারকে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আদায় করে নেওয়ার রেকর্ড শুধু বাঙ্গালির। এই ২১ শে ফেব্রæয়ারী আজ দেশের গন্ডিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আর্šÍজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২১ আজ পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির ভাষার মর্যাদা রক্ষার পথিকৃত হয়ে আছে। এ অর্জন বিশ্বে বাঙ্গালিকে অমর করে রেখেছে এবং অনন্য স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
ভারতে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন কাঠামোগত পর্যায়ে: সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বৈষম্যের চিত্র
ভারতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: ওয়াক্ফ বিল ও কাঠামোগত নিপীড়নের গভীর বাস্তবতা
প্রকাশিত: Bengalivoices.com | তারিখ: ১০ এপ্রিল ২০২৫
লেখক:...
১০ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪৯ AMট্রিপ টু কুয়াকাটা
নিজস্ব প্রতিবেদক.
বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি, যখন ঢেউয়ের দোলায় আন্দোলিত হয়, তখন পূর্ব আকাশে সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সূর্যোদয়ের আলোতে আলোকিত হয়ে পাল্টে যায়...
০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০১:২১ PMকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে..
স্টাফ রিপোর্টার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির একটি শাখা, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার মতো কাজ করতে সক্ষম মেশিন বা সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য কাজ...
০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৪৪ AMপুরান ঢাকার সূত্রাপুরে খাজনা বন্ধের প্রতিবাদ
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে খাজনা বন্ধের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পুরনো ঢাকা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো...
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:২৪ PMহুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ডা: এজাজুলের সাক্ষাৎকার
আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী। তাঁর সঙ্গে অনেক কাজের স্মৃতি রয়েছে, কিছু কথা জানতে চাই।
নির্মাণের নানা কাজেও স্যার আমার ওপর ভরসা রাখতেন। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের...
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:০৮ PMরিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন নিয়ে অবহেলার সুযোগ নেই
স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, বাথ-ব্যথা, আইসিইউ রোগী, অর্থোপেডিক রোগী, প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশ এবং বিভিন্ন অপারেশন পরবর্তী রোগীদের রিহ্যাবিলিটেশন সেবা অত্যন্ত জরুরি। তাই রিহ্যাবিলিটেশন...
১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:৫১ PMব্যাচেলর ইন ট্রিপ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয় লাবনি লাকির
বিশেষ প্রতিবেদক.
‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ‘ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী লাবনি লাকি।গোয়েন্দাগিরিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিম সাহনিক পরিচালিত ও আম্মাজান ফিল্মস প্রযোজিত...
১৯ মে ২০২৫ ০৪:৩৪ PMবাংলাদেশ-ইউএই ক্রিকেট সিরিজের টাইটেল স্পন্সর ওয়ালটন
স্টাফ রিপোর্টার.
শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজের টাইটেল স্পন্সর হয়েছে ক্রীড়াবান্ধব প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ...
১৭ মে ২০২৫ ০৬:০৯ AMকার্টআপ নিয়ে এলো “মে ম্যাডনেস” ক্যাম্পেইন
স্টাফ রিপোর্টার.
“কার্টআপ লিমিটেড”—ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) নিয়ে এসেছে নতুন ক্যাম্পেইন “মে ম্যাডনেস”! এই ক্যাম্পেইন চলবে ১২ থেকে ১৮ মে, ২০২৫...
১৭ মে ২০২৫ ০৩:৫২ AMব্যাচেলর ইন ট্রিপ চলচ্চিত্রটিতে অভিজ্ঞ ও মেধাবী নতুন শিল্পীদের সমন্বয় ঘটেছে
বিনোদন প্রতিবেদক.
চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিম সাহনিকের আসন্ন চলচ্চিত্র ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ‘। বেঙ্গলিভয়েস.কমের সাথে ব্যাচেলর ইন ট্রিপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন এই...
০২ মে ২০২৫ ০২:২০ PMবাড়ছে জংলির হল সংখ্যা
বিনোদন প্রতিবেদক.
মুক্তির ৪র্থ সপ্তাহে এসে ‘জংলি‘র শো বেড়েছে। আর দর্শকও ‘জংলি‘কে ভালোবাসা দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, ছুটির দিনে ‘জংলি‘ আবারও সিঙ্গেল ডে হাইয়েস্ট গ্রস কালেকশন তুলে নিলো।...
২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩২ AMঅভিভাবকরা সাবধান! শিশুদের মধ্যেই বাড়ছে কিডনি রোগ
হু হু করে বাড়ছে শিশুদের কিডনি সমস্যা: সচেতন না হলে বিপদ বাড়বে!
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫ | প্রতিবেদক: Bengalivoices স্বাস্থ্য ডেস্ক
দেশে দিন দিন শিশুর কিডনির সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে...
১০ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০১ AM